সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনে প্রায় ১০ গুন ব্যবধান রাখা হয়েছে- অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রেও ব্যাপক বৈষম্য-এটি একদিনে তৈরি হয়নি বরং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একপেশে সিদ্ধান্তই সুবিধা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ চরম বৈষম্য সৃষ্টি করেছে– Payscale Grade 1 VS Grade 20
গ্রেড ১ এর সাথে গ্রেড ২০ এর তুলনা হয়? না। তুলনা নয় বরং বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে ফাঁরাকটি নেহায়েত কম নয়। একটু একটু করে এক পেশে সিদ্ধান্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পার্থক্য ও সুযোগ সুবিধায় ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। কেউ যেন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের দাবী শুণতে চায় না। বরংবার আন্দোলন, মানববন্ধন বা গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করার পরও বড় কর্তা এবং সরকার আমলে নেয়নি। কিছু সুবিধা বা সুযোগ নিম্ন গ্রেডে রাখা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেগুলোর ধারের কাছেও যেতে পারে না নিম্নগ্রেড তথা ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ। যেন সরকারি চাকরি বলতে ১-১০ গ্রেড-কেই বুঝানো হয় অন্য পদ বা গ্রেড গুলো যেন শুধু শুধু রাখা হয়েছে । মানবেতর জীবন যাপন যেমন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য প্রাপ্য।
মোবাইল বিল সুবিধা কর্মচারী? না। কল করার দরকার হলেই বড় কর্তা যোগাযোগ করতে বলেন অথবা মোবাইল বিল এবং টেলিফোন বিল তাদের জন্যই বরাদ্দ। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য টেলিফোন বা মোবাইল ভাতা বরাদ্দ না থাকলেও বিভিন্ন অফিস বা কর্তৃপক্ষের সাথে তাদেরই যোগাযোগ করতে হয়। অনেক সময় কমন টেলিফোন থাকলেও সেটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন কর্মচারীগণ সরকারি টেলিফোন ব্যবহার করার অধিকারই রাখে না। কর্মকর্তাদের সাথে কর্মচারীদের জন্যও মোবাইল ভাতা বরাদ্দ এখন সময়ের দাবী।
কর্মচারীদের জন্য কি আলাদা পে স্কেল থাকা উচিৎ? হ্যাঁ। অবশ্যই। বাংলাদেশের জাতীয় পে স্কেল প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর পুন:নির্ধারিত বা রিভাইজ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৫ সালে এ দেশের জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষনা করা হয়। প্রস্তাবিত জাতীয় পে স্কেলের আংশিক বাস্তবায়নের ফলে কর্মচারীরা মারাত্মকভাবে এ স্কেলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শতকরা হারে বেতন বৃদ্ধি ফলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা আকাশ পাতাল বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। গতানুগতির পে স্কেলের পদ্ধতি অনুসরণে শতকরা হারে বৃদ্ধি এবং প্রথাগত পে স্কেল অনুসরণ করার ফলে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন স্কেল যেন একীভূত হলেও দুটি আলাদা মানে নির্ধারিত হয়েছে। গ্রেড ব্যবধান ১-১০ গ্রেডে পাকিস্তানের পে স্কেলের মতই ২০% শতাংশ করা হয়েছে অন্য দিকে কর্মচারী তথা ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে গড়ে ২.৫% রাখা হয়েছে। এখানেও ১:১০ বেতন রেশিও অনুসরণ করা হয়েছে।
কেন কর্মচারীরা পে স্কেল চাচ্ছে? পে-কমিশন গঠন পূর্বক বৈষম্য মুক্ত ৯ম পে স্কেল ঘোষনার মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসনসহ বেতন স্কেলের পার্থক্য সমহারে নির্ধারন ও গ্রেড সংখ্যা কমানো প্রয়োজন। পে-কমিশনে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারি প্রতিনিধি না থাকলে পে স্কেলে ঠিক ঠাকমত কাঠামোগত করা হয় না। যে সকল কর্মচারি মূল বেতনের শেষ ধাপে পৌছে গেছে তাহাদের বাষরিক বেতন বৃদ্ধি নিয়মিত করা প্রয়োজন। এছাড়া টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বেতন জ্যৈষ্ঠতা পূর্ণবহাল, ব্লক পোষ্ট নিয়মিতকরণ সহ সকল পদে পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান জরুরি এবং বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ ও ১১-২০ গ্রেডের চাকুরিজীবীদের রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন অথবা ন্যায্য মূল্যে সরকারি ভাবে পন্য সরবরাহ করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।
পে স্কেল একই হলেও ১০ গুন উর্ধ্ব ও নিম্ন গ্রেডের বেতন পার্থক্য রাখা হয়েছে অন্যান্য সুবিধাদি তো পরের ব্যাপার / ক্যাডার বা কর্মকর্তা যেন অন্য জাতের মানুষ বা কর্মচারী
জুলাই মাসে বেতন বাড়েনি? না। গত ১ লা জুলাইয়ে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা/ কর্মচারী তার মূল বেতনের ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষতা হোক নিম্নগামী বা উর্ধ্বগামী ইনক্রিমেন্ট পাবেই ২০ তম গ্রেডের কর্মচারী থেকে শুরু করে ১ম গ্রেডের কর্মকর্তা পর্যন্ত। তবে সিলিংএ পৌছে থাকলে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী আর কোন সুবিধা পান না। অর্থাৎ তার কোন বেতন বৃদ্ধি হয় না।
Caption: Govt. Officer Facilities Bangladesh
সরকারি বড় কর্তার বেতন ভাতাদি ২০২৪ । একজন সচিব কি কি সুযোগ সুবিধা পায় দেখুন
- বেতন ৭৮,০০০/-
- বাড়ী ভাড়া ৩৯,০০০/-
- চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০/-
- শিক্ষা ভাতা ১,000/-
- মোবাইল ভাতা ১,৫০০/-
- টেলিফোন নগদায়ন ২,৮০০/-
- ইন্টারনেট ৩,৮০০/-
- আপ্যায়ন ২,000/-
- ইন্টারনেট মডেম ৫,000/-
- বাবুর্চি এলাউন্স ১৬,000/-
- সিকিউরিটি এলাউন্স ১৬,000/-
- গাড়ী রক্ষনাবেক্ষণ ৫0,000/-
- পদোন্নতি-৪ বছর পর গণহারে পদ শুন্য না থাকলে সুপার নিউমেরি পদ সৃষ্টি করে।
- সুদমুক্ত গাড়ী লোন ৩০,০০,০০০/-
- এছাড়া অভ্যন্তরীন/বৈদেশিক ভ্রমন
- সভা সেমিনারের সম্মানী
- উচ্চতর গ্রেড- ৪ বছর পর পর পদোন্নতি থাকায় উচ্চতর গ্রেডের প্রয়োজন হয় না।
সরকারি বেতন স্কেল বৈষম্য কি চিকনে করা হয়েছে?
হ্যাঁ। শতাংশে দেখলে বুঝা যায় বৈষম্যটা- কর্মকর্তাদের জন্য ১৬০০০ থেকে ৭৮ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১০তম -১ম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় ২০.৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ২০.০৪% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ২০% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা বেশি হয়ে থাকে ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাসা ভাড়ায় পার্থক্য ৩৩,৪০০ টাকা! এছাড়া কিছু লুকায়িত সুবিধা রয়েছে যা সহজে সাধারণদের বুঝা কঠিন ব্যাপার।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৮২৫০ থেকে ১২৫০০ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১১তম -২০তম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় গড়ে ৪.২৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ৪.২৮% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ৪.২৮% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা খুবই নগন্য ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন না বরং বদলিজনিত বিড়ম্বনায় পড়ে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে পে-স্কেল-২০২০ যেমন হওয়া উচিৎ