সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১লা জুলাই হতে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হইবে তা বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলন করছে–রাষ্ট্রয়াত্ত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ২০২৪
অন্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আন্দোলন করছে না কেন? প্রত্যয় পেনশনটি যে সুযোগ সুবিধা রেখেছেন তা সকল স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য একইভাবে প্রযোজ্য হয়নি। রাষ্ট্রায়াত্ত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানে মাসিক পেনশন ও এককালীন প্রাপ্তির সুযোগ নেই। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ সিপিএফ অর্থ, এককালীন টাকা এবং মাসিক পেনশন পেয়ে থাকে যা অন্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় পেনশন সুবিধা ভোগ করে থাকে। তাই নতুন স্কিম চালু হলে এককালীন বড় অংকের টাকা এবং মাসিক পেনশন যেখানে কোন কন্ট্রিবিউট ছাড়াই পেতে সেভাবে পাবেন না। অন্য দিকে সিপিএফ এর মত যে অংক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন হতে টাকা হবে সেই পরিমাণ অংক সরকার জমা দিয়ে মাসিক পেনশন দিবে সরকার যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। যে সকল স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাসিক পেনশন নেই শুধুমাত্র গ্র্যাচুইটি এবং সিপিএফ এ জমাকৃত অর্থ পান তারা আন্দোলন বা কর্ম বিরতিতে যাচ্ছে না। কারণ তাদের জন্য নতুন স্কিমটি কিছুটা সহায়ক বা সুবিধাজনক বলা যেতে পারে।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কত টাকা এককালীন পান? মূল বেতন যদি ৭১২০০ টাকা হয় তবে তিনি এককালীন হিসেবে ৭১২০০*৯০%/২ = ৩২০৪০*২৩০ টাকা = ৭৩,৬৯,২০০ টাকা পেতেন এবং মাসিক পেনশন হিসেবে ৩২০৪০+১৫০০ টাকা = ৩৩,৫৪০ টাকা আজীবন পেতেন এবং তা আজীবন পেতে থাকতেন। এছাড়াও তার মৃত্যুর পর স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেতে থাকতেন। এছাড়াও সিপিএফ এ জমাকৃত অর্থ তিনি ৭০-৯০ লক্ষ টাকা এককালীন পেতে যা আর পাওয়া যাবে না। এসকল সুবিধা বন্ধ করে নিজের জমা এবং সরকারের জমাকৃত অর্থ হতে মাসিক পেনশন দেওয়া হবে যা একটি বৈষম্যের সৃষ্টি করে।
স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ কেমন সুবিধা পায়? ২৫ বছর নিয়মিত চাকুরী শেষে একজন জিপিএফ/ পেনশন ভোগী কর্মকর্তা আনুতোষিক বাবদ ৮০ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে একজন সিপিএফ/ গ্রাচুইটি ভোগী কর্মকর্তা সার্ভিস লাইফের দিগুন (২৫ বছর চাকুরী হলে ৫০, ৩০ বছর চাকুরী হলে ৬০ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক বাবদ প্রাপ্ত হবেন। যা একজন জিপিএফ/ পেনশন ভোগী কর্মকর্তা তুলনায় অনেক কম। অর্থাৎ একজন সিপিএফ/ গ্রাচুইটি ভোগী কর্মকর্তা ২০-৩০ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কম প্রাপ্ত হবেন। এছাড়া সিপিএফ এ জমাকৃত অর্থ পেয়ে থাকেন।
শিক্ষকগণ বড় ধরনের আনুতোষিক বা এক কালীন এমাউন্ট পেতেন যা নতুন স্কিমে রাখা হয়নি এবং মাসিক পেনশন সুবিধা তাদের দেওয়া অর্থ এবং সরকারের জমাকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে মাসিক পেনশন নির্ধারিত করা হয়েছে যা ঐ সকল দিক বিবেচনা করে তাদের ঠকানো হচ্ছে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞগণ।
জাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ আগামী ১ লা জুলাই ২০২৪ হতে লাগাতার কর্মসূচী দিবে বলে ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ও কর্মবিরতি পালন করবেন।
প্রত্যয় পেনশন স্কিম ২০২৪ । সরকারি প্রতিষ্ঠান বাদে গতানুগতিক পেনশন স্কিম থাকছে না
সর্বজনীন পেনশন ২০২৪ । ৫০% ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে?
- সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
- পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
- চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
- চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।
- পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
- নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।
- আপাততঃ সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশনের আওতা বহির্ভূত হবেন। তবে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এ ব্যবস্থার অধীনে আনয়ন করা হবে।
- সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
- পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কি প্রত্যয় স্কিমে ঠকছেন?
হ্যাঁ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। যেটা আগে কাটা হতো না। এ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সেটা সুস্পষ্ট করা হয়নি। সব থেকে বড় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ থেকে ৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতা নতুন প্রত্যয় স্কিমে প্রদান করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে।