সর্বজনীন পেনশন স্কিম ২০২৪

প্রত্যয় পেনশন স্কিম ২০২৫ । বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি তাহলে প্রত্যয় নাকি সেবক পেনশন স্কিম প্রযোজ্য

সরকারি কর্মচারীদের নতুন পেনশন স্কীম আগামী ০১ জুলাই ২০২৫ তারিখ হতে কার্যকর হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরও সংশ্লিষ্ট পেনশন স্কিমে অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে–সরকারি পেনশন স্কিম ২০২৫

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম কি আগামী বছর হতে কার্যকর হবে? হ্যাঁ। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনয়নের লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর আওতায় গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিমের শুভ উদ্বোধন করেন। সরকার এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল স্ব- শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীগণও সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় যারা নতুন কর্মচারী হিসেবে ০১ জুলাই ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ বা তৎপরবর্তী সময়ে চাকরিতে যোগদান করবেন তারা বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কি সরকারি কর্মচারীদের সেবক পেনশনে অন্তর্ভূক্ত করা হবে? সরকারি কর্মচারীদের মত রাজস্বখাতভূক্ত প্রতিষ্ঠান নয় স্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু তাদের মাসিক পেনশন সুবিধা বিদ্যমান এবং এককালীন গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সরকার হয়তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সেবক পেনশন বা সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০২৫ সালে যে পেনশন স্কিম চালু করবে সেটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পেনশন শুরু হওয়ার পূর্বে মারা গেলে নমিনি কি কিছু পাবেন? হ্যাঁ।  সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।

পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে। আপাততঃ সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশনের আওতা বহির্ভূত হবেন। তবে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এ ব্যবস্থার অধীনে আনয়ন করা হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

Caption: Pension Scheme Details pdf

সর্বজনীন পেনশনের স্কিমসমূহ ২০২৪ । আগামী বছর হতে প্রত্যয় স্কিম কার্যকর হবে

  • (ক) প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য): বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রী) নামেও পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) চালু করতে এবং মাসিক জমা পরিশোধ করতে পারবেন।

  • (খ) প্রগতি (ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য): ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি/কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে তাদের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। এক্ষেত্রে upension সিস্টেমে সহজেই কোম্পানীর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অতঃপর উক্ত কোম্পানীয় কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ নিবন্ধন করবেন। কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৩০০০/-, ৫০০০/- এবং ১০০০০/- টাকা।

  • (গ) সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/-, ২০০০/-, ৩০০০/- এবং ৫০০০/- টাকা।

  • (ঘ) সমতা (স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকগণের জন্য): বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ [যাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ (ষাট) হাজার টাকা, তবে বার্ষিক আয়ের সমর্থনে কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন নেই] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/- টাকা, যার ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা প্রদান করবেন এবং অবশিষ্ট ৫০০ টাকা সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করবে।

প্রত্যয় স্কিমে লাম্পগ্রান্ট, পিআরএল ও প্রভেডেন্ট ফান্ড কি বহাল থাকবে?

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন বিধায় ৬৫ বছর থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।। লাম্পগ্রান্ট, পিআরএল ও প্রভেডেন্ট ফান্ড বর্তমান ব্যবস্থায় বহাল থাকবে। কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য বিধায় এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক ৫০০০ টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হলে একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা প্রদান করলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১,২৪,৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তাঁর নিজ আয়ের মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৮ লক্ষ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তাঁর মোট প্রাপ্তি হবে ২ কোটি ২৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা যা তাঁর জমার প্রায় ১২.৫ গুণ। পেনশনার পেনশনের যাবার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তাঁর জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেনশনারের স্পাউজ এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্পাউজ বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। উদাহরণস্বরুপ, একজন পেনশনার অবসরে যাবার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় ৫ বছর পেনশন পেয়ে তারপর মারা গেলেন। এক্ষেত্রে তার স্পাউজ বা নমিনি আরো ১০ বছর পেনশন পাবেন ।

রাষ্ট্রয়াত্ত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ২০২৪ । বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করছে

সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রত্যয় স্কীম ২০২৪ । সর্বজনীন পেনশন স্কীমে গেলে কি এককালীন পাওয়া যাবে না?

প্রত্যয় পেনশন স্কিম ২০২৪ । সরকারি প্রতিষ্ঠান বাদে গতানুগতিক পেনশন স্কিম থাকছে না

আধা-সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যয় পেনশন স্কিম ২০২৪ । নতুন পেনশন স্কিম মূল বেতনের ১০% কাটাবে?

পেনশন নিয়ে নতুন আইন ২০২৪ । স্বশাসিত ও সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে পেনশন থাকছে না?

সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ চাকরি বিধিমালা ২০২৩ । চেয়ারম্যানের মাসিক বেতন সাড়ে তিন লক্ষ টাকাসহ গাড়ি ও মোবাইল সুবিধা

সর্বজনীন পেনশন ২০২৩ । সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত পেনশন কি বাতিল হবে?

Upension gov bd । সর্বজনীন কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পেনশন?

সর্বজনীন পেনশন ২০২৩ । চাঁদা প্রদান পদ্ধতি, পেনশন উত্তোলন ও হার তালিকা দেখুন

 

সর্বজনীন পেনশন ২০২৩ । সুরক্ষা স্কীমে ৫০০০ টাকা চাঁদায় মাসিক ১,৭২,৩২৭ টাকা?

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *