বর্তমানে রিটার্ণ দাখিলের জন্য দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে-সাধারণ পদ্ধতি ও সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি। করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিল করতে চাইলে রিটার্ণ ফরমে বিষয়টি চিহ্নিত করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যারা ২০১৬-১৭ কর বছরে নতুন প্রবর্তিত ফরমে রিটার্ণ দাখিল করবেন তারা রিটার্ণের প্রথম পৃষ্ঠার ক্রমিক নং-২ এর 82BB ধারার অধীনে রিটার্ণ দাখিল করা হয়েছে কিনা এ সংক্রান্ত তথ্যের বিপরীতে “হ্যাঁ” এর ঘরে টিক চিহ্ন দিবে। ক্রমিক নং-২ এর “না” এর ঘটে টিক চিহ্ন প্রদান করলে বা কোন ঘরে টিক চিহ্ন প্রদান না করিলে রিটার্ণটি সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিলকৃত বলে গণ্য হবে। তবে এক পৃষ্ঠার আয়কর রিটার্ণ ফরম IT-GHA2020 সরাসরি সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলযোগ্য রিটার্ণ।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিলের ক্ষেত্রে করদাতা তার নিজের আয় নিজে নিরূপণ করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করেন। ২০২১=২২ কর বছরে কোন ১২ ডিজিট টিআইএনধারী ব্যক্তি করদাতা রিটার্ণে প্রদর্শিত মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য সমুদয় আয়কর ও সারচার্জ পরিশোধ পূর্বক ৩০ নভেম্বর ২৯২১ তারিখের মধ্যে বা উপ কর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিল করতে পারেন। করদাতার ১২ ডিজিট টিআইএন না থাকলে করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিল করতে পারবেন না। তাছাড়া, মোট আয়ের প্রযোজ্য সমুদয় আয়কর ও সারচার্জ পরিশোধ করা না হলে অথবা ৩০ নভেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে বা উপকর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত না হলে করদাতার রিটার্ণ সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় পড়বে না।
বর্ণিত সকল শর্ত পূরণ করে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ণ দাখিল করা হলে আয়কর বিভাগ থেকে করদাতাকে যে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র প্রদান করা হয় তা-ই কর নির্ধারণী আদেশ (assessment order) বলে গণ্য হয়।
পরবর্তীতে উপ কর কমিশনার কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ত্রুটি বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে রিটার্ণটি Process করেন। রিটার্ণ Process এর ফলশ্রুতিতে যদি দেখা যায় করদাতা প্রদেয় অংকের চেয়ে কম বা বেশি আয়কর ও প্রযোজ্য অন্যান্য অংক পরিশোধ করেছেন, তাহলে উপকর কমিশনার করদাতাকে তা অবহিত করে এ বিষয়ে পরবর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
সকল শর্ত পূরণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিলের পর কোন করদাতা যদি দেখেন যে অনিচ্ছাকৃত ভুলে কম আয় প্রদর্শন অথবা বেশি রেয়াত, কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট দাবী/ প্রদর্শন, অথবা অন্য কোন কারণে কর বা প্রযোজ্য অন্য কোন অংক কম পরিশোধ বা পরিগণনা করা হয়েছে তাহলে করদাতা নিজে থেকে একটি ভুল সংশোধনী রিটার্ণ উপ কর কমিশনারের বিবেচনার জন্য তার নিকট দাখিল করতে পারবেন। এরূপ সংশোধণী রিটার্ণ দাখিলের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্ত পরিপালন করতে হবে;
ক) ভুল সংশোধনী রিটার্ণে সাথে ভুলের ধরণ ও কারণ উল্লেখপূর্বক লিখিত বিবরণী দাখিল করতে হবে;
খ) যে পরিমাণ কর বা প্রযোজ্য অন্য কোন অংক কম পরিশোধ করা হয়েছে যে পরিমাণ অংক এবং তার অতিরিক্ত হিসেবে উক্তরূপ অংকের উপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ভুল-সংশোধনী রিটার্ণ দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় পরিশোধ করতে হবে।
ভুল সংশোধনী রিটার্ণে “৮২ বিবি(৫) ধারায় দাখিলকৃত” বা “Filed under section 82BB(5)” কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।
ভুল সংশোধনী রিটার্ণ দাখিল করার পর উপ-কর কমিশনার যদি সন্তুষ্ট হন যে এ সংক্রান্ত সকল শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে তাহলে তিনি রিটার্ণটি জমাগ্রহণ (Allow) করবেন। রিটার্ণটি জমাগ্রহণের উপযুক্ত হলে উপ কর কমিশনার প্রাপ্তি স্বীকার ইস্যু করবেন। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে “৮২ বিবি(৫) ধারায় জমাগ্রহণ করা হলো ” Allowed Under Section 82BB(5) ” কথাটি উল্লেখ থাকবে।
তবে স্বনির্ধারণী রিটার্ণ দাখিলের পর ১৮০ দিন অতিক্রান্ত হলে বা মূল রিটার্ণটি অডিটের জন্য নির্বাচিত হলে এরূপ ভুল সংশোধনী রিটার্ণ দাখিল করা যাবে না। এরূপ ক্ষেত্রে রিটার্ণ দাখিল করলেও তা গ্রহণযোগ্র বলে বিবেচিত হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত Critenrion এর ভিত্তিতে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলকৃত কোন রিটাণৃ বা ভুল -সংশোধণী অডিটের জন্য নির্বাচন করে তা উপকর কমিশনারের নিকট প্রেরণ করতে পারবে।
অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্ণের অডিট পরিচালনার পর উপকর কমিশনার করতাদার আয়, সম্পদ, দায়, ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে রিটার্ণে বা ভুল সংশোধণী রিটার্ণে প্রদর্শিত তথ্যেই বাইরে নতুন কিছু না পেলে অডিট কার্যক্রম নিষ্পত্তিকৃত বলে করদাতাকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।
আর যদি অডিট পরিচালনার ফলশ্রতিতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় করদাতার রিটার্ণে বা ভুল সংশোধনী রিটার্ণে তার আয়, সম্পদ, দায়, ব্যয় ইত্যাদির তথ্য যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি তাহলে উপ কর কমিশনার অডিটে প্রাপ্ত অবহিত করে করদাতাকে নোটিশ প্রদান করবেন। এতে, নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে অডিটে প্রাপ্য তথ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংশোধিত রিটার্ণ (Revised return) দাখিলের জন্য এবং উক্ত রূপ সংশোধিত রিটার্ণের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয় অংশ রিটার্ণ দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় পরিশোধের জন্য বলা থাকবে।
নোটিশের প্রেক্ষিতে যদি করদাতা কর্তৃক সংশোধিত রিটার্ণ দাখিল করা হয় এবং উপ কর কমিশনার যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, রিটার্ণটিতে অডিটে প্রাপ্ত তথ্যের যথাযথ প্রতিফলন রয়েছে এবং সংশোধিত রিটার্ণের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয় অংশ রিটার্ণ দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়েছে তাহলে উপ কর কমিশনার সংশোধিত রিটার্ণটি গ্রহণ করে করদাতাকে একটি গ্রহণপত্র (letter of acceptance) প্রদান করবেন।
আর যদি নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বা উপ কর কমিশনার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে মঞ্জুরীকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে করদাতা সংশোধিত রিটার্ণ দাখিলে ব্যর্থ হন, অথবা করদাতা সংশোধিত রিটার্ণ দাখিল করলেও রিটার্ণটিতে অডিটে প্রাপ্ত তথ্যের যথাযথ প্রতিফলন না থাকে অথবা সংশোধিত রিটার্ণের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয় অংক রিটার্ণ দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত না হয়, তাহলে উপ কর কমিশনার 83 বা 84 ধারা অনুযায়ী (যেটি প্রযোজ্য =) কর নির্ধারণ কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, এ ধারায় দাখিলকৃত কোন ভুল সংশোধনী রিটার্ণ বা সংশোধিত রিটার্ণে যদি করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় প্রদর্শন করা হয় তাহলে উক্ত রির্টাণে মুল রিটার্ণ অপেক্ষা যে পরিমাণ অতিরিক্ত করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় প্রদর্শন করা হবে তা করদাতার অন্যান্য সূত্রের আয় হিসাবে গণ্য হবে।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে ২০২১-২০২২ কর বছরে দাখিলকৃত কোন রিটার্ণ বা সংশোধিত রিটার্ণে অব্যবহিত পূর্ববর্তী কর বছরের নিরূপিত আয় অপেক্ষা ন্যূনতম ১৫% বেশি আয় প্রদর্শন করা হলে এবং করদাতা আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা 75A, 108 এবং 108A এ বর্ণিত শর্ত পরিপালন করলে এবং নিম্নোক্ত সকল শর্ত পূরণ হলে সে রিটার্ণ অডিট কার্যক্রমের আওতা বর্হিভূত থাকবে;
(১) কর অব্যহতি প্রাপ্ত আয় প্রদর্শন করা হয়েছে এরূপ রিটার্ণের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের সপক্ষে উপর্যুক্ত প্রমাণাদি সংযুক্ত করা হলে;
(২) যে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয় বছরে এক বা একাধিক উৎস হতে ৫ লক্ষ টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ প্রদর্শিত হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত ঋণের সপক্ষে ব্যাংক বিবরণী বা হিসাব বিবরণী দাখিল করা হলে [অর্থাৎ এরূপ ঋণ ব্যাংকিং (আর্থিক প্রতিস্ঠানসহ]
(৩) সংশ্লিষ্ট আয় বছরে কোন দান গ্রহণ করা না হলে;
(৪) ধারা 44 অনুযায়ী কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য কোন আয় প্রদর্শন করা না হলে;
(৫) রিটার্ণে কোন কর ফেরৎ দাবী প্রদর্শন করা না হলে বা কর ফেরৎ সৃস্টি না হলে।
২০২১-২২ কর বছরে আয়কর অধ্যাদেশের 82BB ধারায় সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলকৃত নতুন রিটার্ণে ব্যবসা ও পেশা প্রদর্শিত আয়ের ৫ গুণ পর্যন্ত প্রারম্ভিক পুজিঁ প্রদর্শন করা হলে পুজির উৎস ব্যাখ্যা না করলেও চলবে। তবে এরূপ ক্ষেত্রে প্রদর্শিত আয় করমুক্ত সীমার উর্ধ্বে হতে হবে, নিয়মিত হার প্রযোজ্য কর পরিশোধ করতে হবে( আর্থৎ কোন করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় প্রদর্শন করা যাবে না) এবং দাখিলকৃত রিটার্ণের সাথে প্রাম্ভিক পুজি সুবিধা গ্রহণ করেছেন মর্মে লিখিত ঘোষণা প্রদান করতে হবে। উক্ত প্রারম্ভিক পুজিঁ ঐ আয় বছর এবং পরবর্তি আরো চারটি আয় বছর সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বা পেশায় ধরে রাখতে হবে। এ সময়ের কোন আয় বছরের শেষে যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় পেশার পুজির পরিমাণ প্রারম্ভিক মুলধনের পুজি অপেক্ষা কমে গেছে, তাহলে যে পরিমাণ পুজি কম হবে তা ঐ আয় বছরের “ব্যবসায় খাতের আয় হিসেবে করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে।
সাধারণ পদ্ধতি
সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিলকৃত রিটার্ণের ক্ষেত্রে প্রাপ্তি স্বীকার পত্রটি কর নির্ধারণী আদেশ (Assessment order) বলে গণ্য হয় না। রিটার্ণ দাখিলের পর উপ-কর কমিশনার কর নির্ধারণ করেন। করদাতা কর্তৃক রিটার্ণে প্রদর্শিত তথ্য উপ কর কমিশনারের নিকট সঠিক মনে হলে তিনি করদাতাকে শুনানীতে না ডেকেই কর নির্ধারণ করতে পারেন। আবার প্রদর্শিত আয়ের সমর্থনে যথোপযুক্ত তথ্য ও প্রমাণাদি না থাকলে বা উপ কর কমিশনার প্রয়োজন মনে করলে করদাতাকে শুনানীতে উপস্থিত হতে অনুরোধ করে করদাতার বক্তব্য, তথ্য, প্রমানাদি বিবেচনায় নিয়ে কর নিধৃারণ করতে পারেন।
উল্লেখ যে, নিরীক্ষার আওতায় না পড়লেও কোন রির্টাণে আয় গোপন করা হলে বা কর ফাকিঁ থাকলে, সংশ্লিষ্ট কর বছরের রিটার্ণের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের ৯৩ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। একই সঙ্গে রিটার্ণ Process ও করা যাবে।
টিআইএন খুলা না থাকলে সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ণ দাখিল করা যাবে।