সরকারি বাড়ি ভাড়ায় অবাস্তবতা ২০২৫ । ঢাকা সিটিতে ৫,৬০০ টাকা বাসা ভাড়া পাওয়া সম্ভব কি?
সরকারি চাকরিজীবীদের হাস্যকর বাসা ভাড়া বা বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় ৫৬০০ টাকা যা দিয়ে কোন ভাবেই বস্তি ছাড়া মাথা গোঁজার ঠাই পাওয়া যাবে না–৫,৬০০ টাকায় এক রুমের ফ্ল্যাটও পাওয়া যাবে না-বাবা-মা নিয়ে তারা কোথায় এই টাকা দিয়ে ভাড়া থাকবে?-সরকারি বাড়ি ভাড়ায় অবাস্তবতা ২০২৫
৮৫০০ টাকা মূল বেতনে ঢাকা বাসা ভাড়া কত? হ্যাঁ। একটু হিসাব করলেই দেখতে পাবেন যে, ৮৫০০ টাকা ২০ তম গ্রেডে বেতন পান পিওন, ঝাড়ুদার, চৌকিদারসহ হাজারও কর্মচারী। ঢাকা শহরে যাদের বাড়ি ভাড়া আসে ৮২৫০*৬৫% = ৫,৩৬২ টাকা সরকার বা আমলারা দয়া করে সেটি সর্বনিম্ন ৫,৬০০ টাকা করে দিয়েছে। বর্তমানে এই টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। যাদের বাবা মা আছেন তারা কোথায় এই টাকা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী সন্তান সহ কিভাবে থাকবে? যারা সরকারি বাসা ভাড়া পায় তারা থাকতে পারলেও বাহিরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। সরকারি আবাসনে বাসা ভাড়া পেতে উচ্চ মহলের সুপারিশ বা উচ্চ উৎকোচ লাগে এটি প্রকাশিত গোপন সত্য। তাই বর্তমান সময়ে এই ঘৃণিত বাসা ভাড়া প্রাপ্তির কোন কর্মচারীর ই কাম্য নয়।
বেতন বৃদ্ধির সাথে বাসা ভাড়াও নাকি বেড়েছে? হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছেন যাদের বেতন বেড়েছে তাদের বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। এ খবর শুনে বাড়ি ওয়ালাও বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। চলুন দেখি কত টাকা বেড়েছে- প্রথম বছর চাকরি শেষে তার বেতন দাড়ায় ৮,৬৭০ টাকা। সে হিসেবে তার বেতন ৬৫% হারে ৫৬৩৫ টাকা আসে এবং ৪২০ টাকা বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের ৩৫ টাকা বাড়ি ভাড়া বেড়েছে সেই টাকা দিয়ে দিতে হবে বাড়ি ওয়ালাকে তা কি তিনি নিবেন? এমন বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি এবং অবাস্তব বাড়ি ভাড়া বর্তমান সময়ে কোন কর্মচারীর পক্ষে ঢাকা বসবাস সম্ভব নয়।
ঢাকা সিটিতে সরকারি কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়ার হার কত? ঢাকা সিটিতে সরকারি কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া তাদের গ্রেড এবং মূল বেতনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। সাধারণভাবে, মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয়। মেট্রোপলিটন শহরগুলির জন্য, এটি মূল বেতনের ৬৫% পর্যন্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ন্যূনতম একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও বাড়ি ভাড়া হিসেবে বরাদ্দ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা সিটিতে বসবাসকারী কর্মচারীদের জন্য, বাড়ি ভাড়া ৫,৬০০ টাকা থেকে শুরু করে গ্রেড অনুযায়ী ৩৯,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন বৃদ্ধির সাথে বাড়ি বাড়ি ভাড়া ২০২৫ / ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পায় মাত্র ৩৫ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারী: বর্তমান সময়ে একটি বেসরকারি বাসা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে নিতে চাইলে আপনাকে কমপক্ষে ৯০০০ টাকা গুনতে হবে। ছোট পরিবার হলেও ৯০০০ টাকার কমে আপনি কোন ভাবেই বাসা ভাড়া নিতে পারবেন না। অনার্স -মাস্টার্স পাশ করা একজন অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা কর্মীকে আপনি বস্তীতে থাকার পরামর্শ দিতে পারেন না। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একজন অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা কর্মীকে অফিস সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। যদি তাকে ৫৬০০ টাকা বাসা ভাড়া দেওয়া হয়, ৯০০০ টাকা বাসা ভাড়া যোগাতে তাকে বিভিন্ন পথে মাসে ন্যূনতম ৩৪০০ টাকা উৎকোচ সংগ্রহ করতে হয় শুধুমাত্র ঢাকা শহরে বসবাসের জন্য।
Caption: House Rent List 2025
১৪ গ্রেডের কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া ২০২৫ । ১২ বছর চাকরি করা কর্মচারী ঢাকা শহরে থাকার জন্য কত টাকা বাড়ি ভাড়া পাবেন?
- গ্রেড ১৪ মূল বেতন ১৭৫২০ টাকা।
- বাড়ি ভাড়া পাবেন ৩ নং রো মোতাবেক ৫৫% হারে।
- ৫৫% হারে বাড়ি ভাড়া আসবে ১৭৫২০*৫৫% = ৯,৬৩৬ টাকা।
- সর্বনিম্ন ভাড়া ৯৬০০ টাকা।
- যা দিয়ে ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে না।
কর্মকর্তারা নাকি ৩টি বাসা ভাড়া নিতে পারবে?
হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছেন কর্মকর্তারা যে বাড়ি ভাড়া পান তাতে তারা ২টি বাসা ভাড়া নিয়ে বাহিরে থাকতে পারবেন। ১-১০ গ্রেডের কর্মকর্তা: একজন কর্মকর্তার বেসিক বেশি হওয়ার কারণে যোগদান কাল থেকেই ১২১০০ টাকা বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে তিনি ১১০০০ টাকায় একটি টাইলস করা বাসা ভাড়া পেতে পারে। থাকার সু-ব্যবস্থা হলে মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি পূরণ হয়ে গেল। একজন কর্মকর্তা চাইলে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে অথবা কোন প্রকার উৎকোচ গ্রহণ না করেই পরিবার নিয়ে মাথা গোজার ঠাই করে নিতে পারে। মৌলিক চাহিদা পূরণে আমরা কত কিছুই না করি, অথচ একজন সরকারি কর্মকর্তা চাকরির শুরুতেই ভাল মানের বাসস্থান পেতে পারে। একজন সর্বোচ্চ গ্রেডে কর্মকর্তার বাড়ি ভাড়া ৩৯,০০০ টাকা । তিনি চাইলে প্রতি মাসে ১৬,৫০০ টাকা করে দুটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে পারেন।
৫৬০০ টাকায় ঢাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া সম্ভব? না। তবে ৫৬০০ টাকায় ঢাকায় ভালো মানের বাসা ভাড়া পাওয়া বেশ কঠিন। সাধারণত, এই দামে ছোট একটি বেডরুম বা সিট পাওয়া যেতে পারে, তবে পুরো ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ঢাকার বাড়ি ভাড়া পরিস্থিতি বেশ প্রতিযোগিতামূলক এবং সাধারণত বেশি ভাড়ার চাহিদা থাকে। যদি আপনি ৫৬০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা করতে চান, তবে সম্ভবত আপনাকে ছোট একটি রুম, বাথরুম এবং রান্নাঘরের সুবিধা সহ একটি সিট ভাড়া নিতে হতে পারে। এটি একটি মেসে বা হোস্টেলের মতো জায়গায় হতে পারে। এছাড়াও, ঢাকার আশেপাশে (যেমন গাজীপুর, সাভার) অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় কিছু বাসা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, তবে সেগুলি শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে হবে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA) এর একটি অংশ হিসেবে ৫৬০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়, তবে এটি সাধারণত বেসরকারি বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে ঢাকায়। অতএব, ৫৬০০ টাকায় ঢাকায় একটি উপযুক্ত বাসা ভাড়া করা বেশ কঠিন, তবে কিছু বিকল্প থাকতে পারে, যেমন: মেস বা হোস্টেলে সিট ভাড়া করা। শহরের উপকণ্ঠে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় বাসা খোঁজা। অন্যান্য মানুষের সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করা। আপনার প্রয়োজন এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে, এই বিকল্পগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
সরকারি আবাসন বিধিমালায় সাবলেট বা মেস হিসেবে বাসা ভাড়া দেওয়ার অনুমতি নেই, তবে অনেকেই এই নিয়ম ভেঙে ভাড়া দিচ্ছেন। | কিছু ক্ষেত্রে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই সাবলেট বা মেস হিসেবে বাসা ভাড়া নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আয় করছেন, যা অনৈতিক ও বেআইনি | ভাড়া নির্ধারণে অসামঞ্জস্য: সরকারি বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে গ্রেড বা পদমর্যাদা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণের নিয়ম থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। |
এই পরিস্থিতি সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সরকার যদি এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তবে এই অন্যায্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যেতে পারে। | ||
